পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধে আইন প্রণয়ন জরুরি

July 9, 2018 admin 0 Comments

কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষায় পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা মনে করেন, পোড়া ইটের কারণে প্রতি বছর দেশে যেমন কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি পরিবেশে ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্মকে চরম মূল্য দিতে হবে। কাজেই পোড়া ইটের ব্যবহার বন্ধে এখনই আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

শনিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সেমিনার কক্ষে ‘প্রোমোটিং সাসটেইনেবল বিল্ডিং ইন বাংলাদেশ প্রকল্প’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

পূর্তমন্ত্রী বলেন, ইটভাটার কারণে প্রতি বছর শত শত একর কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। এভাবে কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে গেলে ভবিষ্যতে দেশ খাদ্য সংকটে পড়বে। ইটের কারণে যাতে কোনো কৃষিজমি নষ্ট না হয়, সে জন্য হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) ইটের বিকল্প উদ্ভাবন করেছে। নদীর তলদেশ থেকে পলিমাটি সংগ্রহ করে ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। সেই ব্লক দিয়ে বহুতল ভবন বানানো সহজ। এভাবে উন্নয়ন কাজে ব্লকের ব্যবহার নিশ্চিত হলে একদিকে নদী খননের কাজ যেমন হবে, তেমনি কৃষিজমিও রক্ষা পাবে। তিনি জানান, এ জন্য আইন প্রণয়নের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধে আইন প্রণয়ন জরুরি

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান পোড়া ইট ব্যবহার করে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে আগে ইটের বিকল্প সামগ্রী ব্যবহার শুরু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজউক, গণপূর্ত ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ভারতে পোড়া ইটের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রচুর পোড়া ইট ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে রফতানি হয়। ইটের জন্য মাটি কাটলে যে গর্ত সৃষ্টি হয়, বৃষ্টি হলে পার্শ্ববর্তী কৃষিজমির মাটি ও সার ওই গর্তে ঢুকে পড়ে। ফলে আশপাশের কৃষি জমির উর্বরতাও হ্রাস পায়। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক জায়গায় মানুষের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইটের ভাটায় মাটি সরবরাহ।

বুয়েটের উপাচার্য সাইফুল ইসলাম বলেন, একবারেই ইটের ব্যবহার বন্ধ করা হয়তো সম্ভব হবে না। এ জন্য গবেষণা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন- দেশে কী পরিমাণ ইটের ব্যবহার রয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদ ড. এ কে এম আবুল কালাম বলেন, ভারতে মাটিও আছে, কয়লাও আছে। তারপরও তারা পোড়া ইটের ব্যবহার বন্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ কেন পারছে না, তার কারণ বের করতে হবে।

রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি এম এ আউয়াল বলেন, ব্লক দিয়ে ভবন তৈরি করতে গেলে জমির মালিক বা ফ্ল্যাটের ক্রেতারা রাজি হন না। তারা বলেন, দেয়ালে পেরেক মারা যাবে কি-না। আবার পোড়া ইট রঙিন হয়। ব্লক রঙিন হয় না। এ রকম সমস্যা রয়ে গেছে। তারপরও পোড়া ইটের ব্যবহার থেকে সরে আসতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে একটি ভূমি ব্যবহার নীতিমালা করতে হবে। কী পরিমাণ জমিতে ধান চাষ করতে হবে, কী পরিমাণ জমিতে শিল্প-কারখানা থাকবে- এসব এখনই নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বর্তমানে দেশে ছয় হাজার ৭৪০টি ইটভাটা রয়েছে। এর ৪০ শতাংশই অবৈধ ফিপড চিমনি কিলন প্রযুক্তিতে পরিচালিত। এসব ভাটায় বছরে ৭০০ থেকে দেড় হাজার কোটি ইট তৈরি হয়। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৯৬ বিঘা কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এর ১৭ শতাংশের পেছনেই দায়ী ইটভাটা।

ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান বিটিআইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ আর খান বলেন, পোড়া ইটের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব কি-না, তা সরকারকেই খতিয়ে দেখতে হবে। ইট প্রস্তুতকারক বি এম দুলাল বলেন, যারা অটো ব্রিকসের ব্যবসা করেন, তাদের প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া আছে। পোড়া ইটের ব্যবহার বন্ধ করে দিলে এসব ঋণগ্রহীতা যাবেন কোথায়? তারপরও এই দেশ আমাদের মা। দেশটাকে বাঁচাতে হবে। এ জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।

Leave a Reply