পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে ইটভাটা নির্মাণ ও ইট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘনের অপরাধে শাস্তি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দেওয়া লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা পরিচালনার জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে প্রচলিত আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগে এ অপরাধের শাস্তি ছিল এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। নতুন আইনে জরিমানার অর্থ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশসম্মত ছিদ্রযুক্ত ইট ও ব্লক প্রস্তুতকরণে উৎসাহিত করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়াই ভাটার মালিকরা এসব ইট ও ব্লক প্রস্তুত করতে পারবেন।
এমন বিধান রেখে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৮’-এর খসড়া প্রস্তুত করেছে সরকার। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে এটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন হতে পারে। বৈঠকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বিশেষ দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
এ ছাড়াও বৈঠকে ‘বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র আইন’-এর খসড়া-২০১৮ নীতিগত, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ আইন-২০১৮, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা অধিকার আইন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (সংশোধন) ও একাদশ জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন হতে পারে।
প্রস্তাবিত আইনে ২০১৩ সালের প্রণীত আইনটিতে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সাজার মেয়াদ বহাল রেখে অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার অনুমোদিত ইটভাটা ছাড়া ইটভাটা স্থাপন, পরিচালনা কিংবা চালু করা যাবে না। ইট প্রস্তুতের জন্য ডিসির অনুমোদন নিয়ে যে কেউ মজা পুকুর, খাল, বিল, নদী, খাঁড়ি, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটতে পারবেন। এ নিয়ম মানা না হলে দুই বছরের কারাদণ্ড ঠিক রেখে দুই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হচ্ছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমার পর ইটের কাঁচামাল হিসেবে মাটির ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে ইটভাটাগুলো নির্ধারিত হারে ব্লক না করলে শাস্তির বিধান থাকছে। সেই শাস্তি হিসেবে দুই লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। আগে জরিমানা ছিল এক লাখ টাকা।
ইট প্রস্তুতের মান মাত্রার বেশি সালফার, অ্যাশ, মার্কারি- এগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে জরিমানা ছিল ৫০ হাজার টাকা। সেটি বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হচ্ছে।
সংশোধিত খসড়া আইনে ব্লকের ক্ষেত্রে ও হলো ব্রিক বা ছিদ্রযুক্ত ইট প্রস্তুতে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইটে কাঁচামাল হিসেবে মাটির ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ইটভাটায় উৎপাদিত ইটের একটি নির্দিষ্ট অংশ হলো ব্রিক বা ব্লক প্রস্তুতের নির্দেশনা জারি করতে পারবে। আগে ৫০ শতাংশ হলো ব্রিক করার নির্দেশনা ছিল। মাটির ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে ইট বা মাটির বিকল্প উপাদানের ব্লক উৎপাদন ও ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে পারবে।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আগে ইটভাটার জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র নিতে হতো। দ্রুত কাজ করার জন্য আইন কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে। তবে পাহাড় বা টিলা এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করতে হলে সেটি আধা কিলোমিটার দূরে হতে হবে।
সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য তহবিল গঠন করা যাবে :সরকারি দান, অনুদান, সাহায্য অথবা মঞ্জুরি অথবা বরাদ্দ করা অর্থ দিয়ে তহবিল গঠন করা যাবে। এ ছাড়াও দানশীল ব্যক্তির দান নিয়ে, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, সরকারি/আধা সরকারি/বেসরকারি সংস্থা থেকে পাওয়া অর্থ, জাতিসংঘ বা এর কোনো বিশেষায়িত সংস্থা, কোনো আঞ্চলিক সংস্থা, বহুজাতিক বা আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়ন দিয়ে তহবিল সমৃদ্ধ করা যাবে। তহবিলের অর্থ সমাজের অবহেলিত নারী, শিশু, অনগ্রসর, সুবিধাবঞ্চিত বা কম সুবিধাপ্রাপ্ত, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী, অসহায়, দুর্বল, অক্ষম, শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের সাহায্যে ব্যয় করা যাবে। এমন বিধান রেখে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ আইন, ২০১৮ প্রস্তুত করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত এই আইনে একটি পরিষদ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও নিজস্ব সিলমোহর থাকবে। পরিষদের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় হবে। তবে প্রয়োজনে সরকারের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে এর শাখা কার্যালয় স্থাপন করা যাবে। একজন নির্বাহী সচিবসহ এর পরিচালনায় ৩৯ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড থাকবে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী এর সভাপতি হবেন। মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চেয়ারম্যান করে একটি নির্বাহী কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। কমিটি পরিচালনা বোর্ডের দেওয়া সব কাজ সম্পাদন, ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবে