ঢাকা জেলায় সাড়ে ৫০০ ইটভাটা রয়েছে, যার প্রায় অর্ধেকেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ইটভাটার দূষণে রাজধানীবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ রোধে ঢাকা বিভাগের ৫ জেলার অবৈধ ইটভাটা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই জেলাগুলো হলো- ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ। গতকাল থেকে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এটা জরুরি ছিল।
তবে লোকদেখানো অভিযান নয়, কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চাই। ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ইট পোড়ানো কার্যক্রম। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনে (২০১৩) নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ ভাটাই স্থাপন করা হয়েছে বা হচ্ছে লোকালয় তথা মানুষের বসতবাড়ি, গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দরের অতি সন্নিকটে, কৃষি জমিতে, নদীর তীরে, পাহাড়ের পাদদেশে। ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদি জমির উপরিভাগ, নদীর তীর এবং পাহাড়ের মাটি, যা আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কাঠ ও অত্যন্ত নিম্নমানের কয়লা পোড়ানো এবং স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যবহার করায় ইটভাটাগুলোতে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। সে ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা বেশি আছে এমন শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়।
শুধু ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য বছরে জিডিপির ১ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ সংসদে পাস করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই তারিখের গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আইনটি ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করে। কিন্তু এ আইনের বাস্তবায়ন নেই। হাইকোর্টের নির্দেশে চার জেলায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযান সারাদেশে হওয়া জরুরি। পাশাপাশি দেশের সব ইটভাটার কার্যক্রমই পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে ভবন নির্মাণে ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহারে যেতে হবে সংশ্লিষ্টদের। দেশে এ প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব দিতে হবে। কাজেই সব দিক বিবেচনা করে ইটের পরিবর্তে ব্লকের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।